শিশুর মত কাঁদতে দেখেছি আলহাজ্ব এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে-একেএম বেলায়েত হোসেন
স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে মহিউদ্দিন চৌধুরীর জীবনের যে ক্ষতি হয়েছে তা কোন কিছুর বিনিময়ে পুরণ হবার ছিলনা।
একবার আমি তোমাকে ড্যাড বলে ডাকতে চাই" ' টুম্পা'র জীবনের শেষ আকুতি।কথাটি
স্মরণ করে শিশুর মত কাঁদতে দেখেছি চট্টল বীর
আলহাজ এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে (মৃত্যুর আগে ইংরেজিতে লেখা ফৌজিয়া সুলতানা টুম্পার
চিঠিটি অনুবাদ করলে মোটামুটি দাঁড়ায় এ রকম: ‘প্রিয় আব্বু,
আমি জানি না এ চিঠি কোনো দিন তোমার কাছে পৌঁছে দিতে পারব কি না। কিন্তু তোমাকে
নিয়ে আমার অনুভূতি প্রকাশের জন্য এ চিঠি আমাকে লিখতেই হবে।...আমি এ পর্যন্ত যা দেখেছি,
তুমি হচ্ছ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বাবা। অবশ্য যেকোনো মেয়েই তার বাবা সম্পর্কে এ কথা বলতে
পারে। তবে আমি মনে করি, যদি তুমি কাউকে ভালোবাসো, তাদের তোমার এভাবে বলতে হবে না।
তারা জানবে। যেকোনোভাবেই হোক, তারা তা জানবে।
‘আমি কখনো তোমাকে বলতে পারিনি,
তুমি আমার কাছে কী! তোমার কাছে কোনো দিন মনের অনুভূতি প্রকাশ করতে পারিনি। শুধু
এটুকু বলতে পারি, যখন এ চিঠি লিখছি, আমার চোখ ছাপিয়ে পানি নামছে। আমি তো কখনো তোমাকে
বলতে পারিনি তুমি শ্রেষ্ঠ বাবা, তুমি আমার আদর্শ। আব্বু, তোমাকে কি একটা প্রশ্ন করতে
পারি? তুমি তো আল্লাহকে বিশ্বাস করো। একজন ভালো মানুষের সব গুণ তোমার মধ্যে আছে।
তোমার ঈশ্বর কি সেটা দেখছেন না? তিনি কি দেখছেন না তুমি কী কষ্ট পাচ্ছ? এত কিছুর পর
আমি কি আল্লাহর ওপর আস্থা রাখব? কিন্তু আমি রাখছি।
সেই সকালবেলাগুলো আজ খুব মিস করছি, যখন তুমি খুব ভোরবেলা উঠে ছড়া
আবৃত্তি করতে...। আব্বু, তোমাকে আজ হাজারবার ডাকতে ইচ্ছা করছে...চিৎকার করে তোমাকে
ডাকতে ইচ্ছা করছে।
...লবণাক্ত অশ্রুর বিন্দু ছাড়া আমি আর তোমাকে কী দিতে পারি? যে কাগজটাতে
লিখছি, সেটা আমি আর দেখতে পাচ্ছি না। আমার চোখের পানিতে কাগজটা ভিজে যাচ্ছে।
তুমি আমার হৃদয়ের সবচেয়ে গভীরতম স্থানটিতে আছ, চিরকাল সেখানেই তুমি থাকবে।
—তোমার টুম্পা)।
স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে মহিউদ্দিন চৌধুরীর জীবনের যে ক্ষতি হয়েছে তা কোন কিছুর বিনিময়ে পুরণ হবার ছিলনা যে রাজনীতির জন্য তাঁর ব্যাক্তিগত জীবন বার বার বিধ্বস্ত -ক্ষত বিক্ষত হয়েছে, যাদেরকে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করে -ছিলেন তাদের কাছ থেকেও পেয়েছেন অনাকাঙ্খিত দুঃখ - মর্মবেদনা। দলের ভিতর তার পোষ্য সুবিধা বাদীরাই তাঁর মর্মবেদনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আমার এ'বুকে অনেক স্মৃতি, তাঁর অনেক না বলা ব্যাথার কথা জগদ্দল পাথরের মত চাপা পরে আছে। কোনদিন তা বলে যেতে পারবো কিনা
জানি না। তবে একটা কথা বলে রাখি মহিউদ্দিন চৌধুরীর যেসব জীবনীগ্রন্থ
লেখা হয়েছে তার কোনটাই পুর্নাঙ্গ নয়। ওগুলো
তাঁর অসমাপ্ত আত্মজৈবনিক গ্রন্থ। আমরা বাঙ্গালিরা চির কালই পরশ্রীকাতর। বঙ্গবন্ধু বলেছেন
বাংলা ভাষায় 'পরশ্রীকাতর' শব্দটির অন্যকোন
ভাষায় কোন প্রতিশব্দ নাই। পরশ্রীকাতরতার কারনে আমরা মহিউদ্দিন চৌধুরীর রাজ -নৈতিক বৃহৎ
কর্মযজ্ঞের প্রশংসা করতে পারলামনা। যেকারণে নিজেরাই ছোটো হয়ে যাচ্ছি। হারিয়ে যেতে বসেছে
।
পরম করুণাময়ের নিকট টুম্পা মা মনির আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।
একেএম বেলায়েত হোসেন-উপিদেষ্টা-চট্টগ্রাম মহানহর আওয়ামী লীগ।
No comments