Header Ads



আজ শহীদ নুর হোসেন দিবস-একেএম বেলায়েত হোসেন।

 

আজ শহীদ নুর হোসেন দিবস

১০ নভেম্বর, ১৯৮৭ সাল।

**********************

আজ শহীদ নুর হোসেন দিবস । সৈরাচার বিরোধী আন্দো- লনে উত্তাল সারা দেশ। লাগা তার কর্মসূচীর অংশ হিসেবে  আজ ছিল সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচি। রাজধানী  ঢাকার  জিরো পয়েন্টকে ঘিরে  চতুর্পাশের রাস্তা-ঘাট লাখো জনতার পদভারে প্রকম্পিত। সৈরাচারের আতংক চট্টগ্রামের অবিসং -বাদিত জন নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে আরও আগে থেকেই কারাবন্দী করে রাখা হয়েছিল। নেতারা সব গা-ঢাকা  দিয়ে আছেন। কারাগারে আটক মহিউদ্দিন চৌধুরী ছাত্রনেতা হাসান মাহমুদ শমসেরের নিকট এক জরুরী বার্তা  প্রেরণ করেন। জনৈক আবদুল ওহাব মহিউদ্দিন ভাইয়ের  বার্তা আদান প্রদান  করতেন। নির্দেশ অনুসারে শমসের নেতাদের সাথে ব্যাক্তিগত ভাবে যোগাযোগ করে।

 

নেতাদরকে গোপন স্থানে বসে চলমান আন্দোলন নিয়ে আলোচনা করার  অনুরোধ জানায়। শমসেরের কথায় আমরা প্রথমদিন সদর ঘাটে আলহাজ নূরউদ্দিন চৌধুরীর অফিসে একত্রিত হলাম। পরদিন থেকে পাথর ঘাটায় ব্যবসায়ী শামসুল আলমের বাসায় একত্রিত হতে থাকি। নভেম্বর মাসের নয় তারিখ সকাল বেলা আমরা যার যার মত করে শামসুল আলমের বাসায় চলে গেলাম। সকালের নাস্তা সে বাসায় করা হল।

আমরা চট্টগ্রাম থেকে সেদিন সাড়ে তিনটার আন্তঃনগর ট্রেন যোগে আগ্রহী ছাত্রলীগ যুবলীগ কর্মীদের ঢাকা পাঠানোর ব্যবস্থা করছিলাম। এসময় তদানিন্তন শ্রম সম্পাদক লিয়াকত  আলী খান সন্তোষ এবং স্বপন নামে দু'জন কর্মীকে সাথে  নিয়ে প্রবেশ করলো। এসময় লিয়াকত শমসের এবং সন্তোষ নিজেদের মধ্যে কিছু সময় শলা পরামর্শ করলো। সেকান্দর ভাইয়ের পরামর্শে আমার কাছে গচ্ছিত দশ হাজার টাকা লিয়াকতকে দিয়ে দিলাম। টাকা নিয়ে তারা তাদের গোপন আস্তানার উদ্দেশ্যে চলে গেল।

 

 বিকাল আড়াইটার সময় সেকান্দর হায়াত খান এবং আমি মহানগর ছাত্র নেতারা সহ চট্টগ্রাম রেলওয়ে ষ্টেশনে উপস্থিত হলাম৷ পরদিন দশ তারিখ ঢাকা সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচিতে অংশ  গ্রহণে ইচ্ছুক ট্রেন যাত্রীদের প্রত্যেককে একখানা টিকেট এবং কিছু নগদ টাকা দিলাম। এসময় উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মঞ্জুর আমাদের কাছে এসে বলল উত্তর জেলা ছাত্রলীগের কিছু কর্মী ঢাকা যেতে আগ্রহী কিন্তু জেলা আওয়ামিলীগ নেতারা কেউ আসেনি বলে তাদের পাঠানো যাচ্ছেনা। আমার কাছে তখনও কিছু টিকেট এবং টাকা জমা ছিল। সেকান্দর ভাই সহ আলাপ করে টিকেট এবং টাকাগুলো মঞ্জুকে হস্তান্তর করে আমরা চলে গেলাম। বিকাল পাঁচটার সময় আমতলা

 

গেলাম। সমস্ত এলাকা লোকে লোকারণ্য। আমি দারুল ফজল মার্কেটের সমনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। হঠা আশেক রসুল

টিপু এসে আমাকে টেনে একপাশে নিয়ে গিয়ে বললো : বেলায়েত ভাই সর্বনাশ হয়ে হয়ে গেছে - সন্তোষ এবং স্বপন  দু'জনই বোমা বিস্ফোরণে মারা গেছে। মুহূর্তে মনে হলো আমার পায়ের তলার মাটি সরে গেল - আসমান ভেঙ্গে মাথায় পরল যেন। টিপু আর-ও বললো পুলিশ লাশ নিয়ে গেছে তবে তাদের শরীর এমন ভাবে পুরে গেছে,কাউকে শনাক্ত করারকোন উপায় নেই। কিন্তু একটা দুঃসংবাদ আছে। মঞ্জু ভাই পাশের রুমে থাকে। পুলিশ  তাঁর  পেন্ট সার্ট গুলো নিয়ে গেছে। পেন্ট শার্টের পকেটে তার ভার্সিটির আইডি কার্ড  রয়েছে। রাতে আমাদের অনুরোধে কোতোয়ালি থানার তদা- নিন্তন ওসি আইডি কার্ড সহ জামাকাপড় ফেরত দিয়েছি- লেন!

 

সে সব দুর্দিন দুঃসময়ে বিভিন্ন  গোপন বৈঠকে যারা উপস্থিত থাকতেন তারা হলেন : যুগ্ম সম্পাদক সেকান্দর হায়াত খান, লিয়াকত আলী খান,হাজী নুর উদ্দিন চৌধুরী, আমি একেএম বেলায়েত হোসেন, ছাত্র নেতা হাসান মাহমুদ শমসের,আশেক রসুল টিপু প্রমুখ। সার্বিকভাবে সহযোগিতায় ছিলেন আাদের শ্রদ্ধেয় প্রবীণ নেতা মোহাম্মদ ইসহাক মিয়া।

 

পরদিন ১০ নভেম্বর সচিবালয় ঘেরাও  কর্মসূচি চলা কালে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখহাসিনা ঢাকা জিরো পয়েন্টে অবস্থান করছিলেন। এমন সময় খালি গায়ে এক যুবলীগ কর্মী সভানেত্রীর সামনে হাজীর হয়। তার বুকে লেখা ছিল সৈরাচার নিপাত যাক, পিঠে লেখা ছিলো গনতন্ত্র মুক্তি পাক। ঐ অবস্থায় পুলিশ তার উপর গুলি চালিয়ে তার বুক ঝাঁঝরা করে দেয়। মুহূর্তে মাটিতে লুটিয়ে পরে তার নিষ্প্রাণ দেহ।  তার নাম নুর হোসেন। সে থেকে প্রতি বছর ১০ নভেম্বর শহীদ নুরহোসেন দিবস হিসেবে পালিত হয়।

 

আজকের দিনে আমি শহীদ নুর হোসেন,শহীদ সন্তোষ এবং শহীদ স্বপন সহ যারা সৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে শহীদ হয়েছেন তাঁদের প্রত্যেকের আত্মার প্রতি বিনম্র জানাচ্ছি এবং তাদের আত্মার শান্তি কামনা করছি।

একেএম বেলায়েত হোসেন

উপদেষ্টা-চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ।

No comments

Theme images by merrymoonmary. Powered by Blogger.