জননেতা জহুর আহমদ চৌধুরী
১৯৪৯ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠন প্রক্রিয়ায় আরমানিটোলায় অনুষ্ঠিত প্রথম বৈঠকে জহুর আহমদ চৌধুরী চট্টগ্রামের প্রতিনিধিত্ব করেন।
চট্টগ্রাম: আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, নগর আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক, ভাষা ও স্বাধীনতা সংগ্রামী, ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের পুরোধা, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিগত বন্ধু ও পরম বিশ্বস্ত সহকর্মী, চট্টগ্রাম থেকে ৫৪’তে যুক্তফ্রন্টের এমএলএ, ১৯৭০ ও ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগের সাংসদ এবং বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন জননেতা জহুর আহমদ চৌধুরী।
জন্ম: ১৯১৬ সালে চট্টগ্রাম জেলার উত্তর কাট্টলী গ্রামে। তাঁর পিতার নাম আবদুল আজিজ চৌধুরী এবং মাতা জরিনা বেগম। তিনি কাট্টলী নূরুল হক চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয় ও পাহাড়তলী রেলওয়ে হাইস্কুলে পড়াশোনা করেন। ।
১৯৩২ সালে তিনি অবিভক্ত ভারতের কলকাতার খিদিলপুর অঞ্চলের খ্রিষ্টান মিশনারী হাই স্কুল থেকে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন .পরে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। উত্তাল বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে একজন ত্যাগী দেশকর্মী রূপে সম্পৃক্ত হওয়ায় এখানেই তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে। ১৯৩৮ সালে জহুর আহমদ চৌধুরী সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন।
১৯৪০ সালে তিনি মুসলিম লীগ রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৪৯ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠন প্রক্রিয়ায় আরমানিটোলায় অনুষ্ঠিত প্রথম বৈঠকে তিনি চট্টগ্রামের প্রতিনিধিত্ব করেন। জহুর আহমদ শ্রমিক রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। আমিন জুট মিলস শ্রমিক ইউনিয়ন, বার্মা অয়েল মিল শ্রমিক ইউনিয়ন, সিটি ট্রান্সপোর্ট ড্রাইভার অ্যাসোসিয়েশনের শ্রমিকদের নেতৃত্ব দেন। তিনি পাকিস্তান ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের সহকারি সম্পাদক ছিলেন। তিনি ভাষা আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটির পক্ষ থেকে ৫ মার্চ শহীদ দিবস পালনের অংশ হিসেবে চট্টগ্রামের লালদিঘি ময়দানে সরকারের নীতি ও নির্যাতন প্রতিরোধের ঘোষণা দেন।
জহুর আহমদ ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে চট্টগ্রাম কেন্দ্র থেকে যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসন জারীর পর আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। তিনি ১৯৬২-এর শিক্ষানীতি বিরোধী আন্দোলনে রাজনৈতিক সহায়তা প্রদান করেন। ছয়দফার আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন এবং গ্রেফতার হয়ে কারাবরণ করেন। তিনি উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানকালে চট্টগ্রামের রাজনীতিকে সংগঠিত করেন। তিনি ১৯৬৯ সালের ২০ মার্চ বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে রাওয়ালপিন্ডিতে অনুষ্ঠিত গোলটেবিল বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। জহুর আহমদ চৌধুরী ১৯৭০ সালের নির্বাচনে চট্টগ্রামের কোতোয়ালী আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।
১৯৭১ সালের মার্চের অসহযোগ আন্দোলনে জহুর আহমদ চৌধুরী চট্টগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি চট্টগ্রামে সংগ্রাম কমিটির সদস্য ছিলেন। পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে চট্টগ্রাম শহরের পতন ঘটলে তিনি চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ভারতের আগরতলা গমন করেন। সেখানে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী শচীন সিংহের বাসভবনে বাংলাদেশের নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের বৈঠকে তিনি উপস্থিত ছিলেন। জহুর আহমদ চৌধুরী মুজিবনগর সরকার কর্তৃক গঠিত আঞ্চলিক কাউন্সিল পূর্ব-দক্ষিণ অঞ্চল-২ এর চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন।
জহুর আহমদ চৌধুরী স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম মন্ত্রিসভায় শ্রম ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। শ্রমমন্ত্রী হিসেবে তিনি জেনেভায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার সম্মেলনে (আই এল ও কনভেনশন) বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন। তিনি ১৯৭৩ সালের সংসদ নির্বাচনে কোতোয়ালী-পাঁচলাইশ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী নিযুক্ত হন। জহুর আহমদ চৌধুরী আমৃত্যু আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির শ্রম বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। ১৯৭৪ সালের ১ জুলাই ঢাকায় এ মহান নেতার মৃত্যু হয়।
No comments