Header Ads



ফেসবুক আর পত্রিকা খুললেই দেখি শুধু অভিনন্দন আর ফুলেল শুভেচ্ছা-হাসান মনসুর

জানিনা সামনে অভিনন্দন জানিয়ে রাস্তায় রাস্তায় রঙিন ডিজিটাল ব্যানার লাগানো হবে কিনা?

সবুক আর পত্রিকা খুললেই দেখি শুধু অভিনন্দন আর ফুলেল শুভেচ্ছা

হাসান মনসুর

এখন এক নতুন কালচার হয়েছে। দলের পদপদবী ব্যাবহার করে প্রশাসনের দালালী। ফেসবুক আর পত্রিকা খুললেই দেখি শুধু অভিনন্দন আর ফুলেল শুভেচ্ছা।

আগে দেখতাম কোনো ত্যাগী রাজনৈতিক নেতা, সমাজের বিশিষ্ট কৃতিজনকে অথবা কৃতি ছাত্রদের এভাবে সম্মানিত করা হতো এখন এই অভিনন্দন কালচার ট্রান্সফার হয়েছে সরকারের আমলা,  ইউএনও, ডিসি,পুলিশ কমিশনার থেকে শুরু করে থানার ওসি, এস,আই, মন্ত্রী এমপিদের পিএস এপিএস  পরযন্ত।  এসব অযাচিত  তোষামোদি করে তাদের স্বাভাবিক সরকারী কাজে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছি আমরা।

এই সরকারী কর্মকর্তাদের খুশী ও অভিনন্দন জানানোর মুল কারন বদলী, প্রমোশন,নতুন নিযুক্তি।ডিজিটাল যুগে নতুন সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে এই ফুল দেওয়া , জানিনা সামনের দিনে জেলায় নতুন ডিসি, থানায় নতুন ওসি যোগ দিলে - তাকে অভিনন্দন জানিয়ে রাস্তায় রাস্তায় রঙিন ডিজিটাল ব্যানার লাগানো হবে কিনা ?

এই অফিসাররা আমাদের সমাজের অনিবার্য একটা অংশ - আমাদের মতোই সাধারণ নাগরিক। রাষ্ট্র পরিচালনায় তারা প্রশাসনিক ভাবে সাহায্য করে বলেই তাদের পদকে আমরা সম্মান করি।তাদের অভিনন্দন জানানোটা অপরাধ নয় ।তবে তা হতে হবে কিছু নিয়ম মেনে । কারণ অতীতে ও আমলা-পুলিশরা ছিল , নেতাও ছিল - এই ধারা আমরা দেখিনি ।

আজকাল প্রায় ফেশবুকে দেখি , এমনকি পত্রিকার পাতায় বিজ্ঞাপন আকারে দেখি আমলা-পুলিশ কর্মকর্তাদের থানায় গিয়ে ছাত্র বা রাজনৈতিক নেতারা ফুলেল শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন।

অতীতে এলাকায় - কৃতী মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের সাথে এলাকার ছাত্রনেতারা যোগাযোগ রাখতেন , সংগঠনের কাজে টেনে আনতে চাইতেন,  গুনিজনদের বাসায় গিয়ে সম্মাননা পত্র দেওয়া হতো আর এখন ডিসি এসপি,  পুলিশকে নিয়ে সেলফি , থানায় গিয়ে ফুল দেওয়া , পারিবারিক জন্মদিন ম্যারেজ ডেতেও তাদের দাওয়াত দিয়ে  সম্পর্ক জাহির করা হয়।

সরকারী কর্মকর্তাদের উচিৎ এসব টেকনিকালি এভয়েড করা তা না হলে সাধারণ জনগণের সাথে এদের দূরত্ব বেড়ে যাওয়া স্বাভাবিক ।

প্রজাতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ এই অংশটিকে স্বাধীন, নিরেপক্ষ ও নিজের মতো করে কাজ করতে দেওয়া উচিৎ- মনে রাখতে হবে এরা সক্রিয় থাকলেই রাষ্ট্র কার্যকর থাকবে ।

অহেতুক এই গুরুত্বপূর্ণ মানুষগুলোকে ফুল দিতে গিয়ে, সখ্যতা করতে গিয়ে - সাধারণ আম জনতা যেন নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত না হয় - সেটা আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।

পুনশ্চ - ১৯৯০ দশকের শুরু থেকেই -নিজের এলাকায় ছাত্রলীগ আওয়ামী লীগ সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলাম। এলাকার কিছু পরিচিত দলের  সমর্থক ছিল যাদের মিছিল মিটিংয়ে ডাকতাম না- ঘরোয়া বৈঠকে আসতে বলতাম।  তাও ১০ বার বললে ১ বার আসতেন। এই ধরনের কিছু লোকও আজকাল দল সরকারে থাকার সুবাদে সক্রিয়  - সবচেয়ে বেশী মজা লাগে নতুন চালু হওয়া বিট পুলিশিং বা সরকারী কর্মকর্তারা আসবে  এজাতীয়  সভায় ২ ঘন্টা আগে গিয়ে বসে থাকে পারলে আমাদেরও এসে দাওয়াতনামা দেয়।

দল করে অথচ দলের কার্যনির্বাহী কমিটির মিটিং এ আসার চেয়ে এসব কাজে তাদের বেশী উৎসাহ। মনে রাখবেন - দালালী বা সম্পর্ক যেটাই করুন সেটা দল যতোদিন পর্যন্ত সরকারে আছে - তারপরে কিন্ত আপনার ওদের অফিসে যাওয়ার সুযোগ নাই। ১৯৯৪ সালের ২৬ ডিসেম্বরে চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানার তৎকালীন (পূর্ব পরিচিত) ওসি মরহুৃম দেলোয়ার হোসেন নন্দন কানন এলাকা থেকে আমাকে গ্রেফতার করেছিল।

সাথে ছিল ওমরগনি এমইএস কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক জি,এস হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর, হুমায়ন কবির রানা - যেহেতু দল বিরোধী দলে তিনি বললেন তিন জনকে ১০ হাজার করে ৩০ হাজার টাকা দিতে হবে , তা না হলে তিনি বিশেষ খমতা আইনে ডিটেনশন দিবেন -  উপরের চাপ আছে।  ৩ জনে থানা হাজতে  বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম-  এই রাতে এতো টাকা পরিবার কেমনে যোগাড় করবে - যে মামলা আছে তা জামিন নিতে নিতেই ২/৪ মাস লেগে যাবে - ডিটেনশন দিলে দিক।

যদিও সব মামলায় ২১ দিনের ভিতর জামিন হয়ে গেলেও এই আটকাদেশের কারনে ৬ মাস ২২ দিন কারাগারে কাটাতে হয়েছিল।  শখ ছিল ওসি দেলোয়ার এর সাথে কথা বলবো - কিন্ত  ভাগ্যের নির্মম পরিহাস এই লোক অন্য এক থানার ওসি দায়িত্ব পালন কালীন সময়ে গাড়ী নিয়ে উঁচু পাহাড় থেকে খাদে পরে বিভৎস ভাবে মারা যান। হাসান মনসুরের facebook থেকে।

হাসান মনসুর

সাঃ সম্পাদক (সাবেক)

কোতায়ালী থানা আওয়ামী লীগ - চট্টগ্রাম মহানগর


No comments

Theme images by merrymoonmary. Powered by Blogger.