বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদে-প্রতিরোধে,আলহাজ্ব এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী
ভারতে মহিউদ্দিন চৌধুরীর কষ্টের জীবন কাটে প্রায় দুই বছর। এসময় তাঁর উপর নেতা-কর্মীদের থাকা-খাওয়ার দায়িত্বও যোগ হয়।
১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট নির্মমভাবে সপরিবারে হত্যা করা হয় এই দেশের কারিগর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর কার্যত দলীয়ভাবে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়, থমকে যায় জাতি। সে সময় কিছু মানুষ বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে খুনী প্রশাসনের বিরুদ্ধে জড়িয়ে যান সশস্ত্র যুদ্ধে যা "প্রতিরোধ যুদ্ধ" নামে পরিচিত। ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত এই প্রতিরোধ যুদ্ধ চলমান থাকে। জানা যায়, এই যুদ্ধে প্রায় ১০৪ জন যোদ্ধা মৃত্যুবরণ করেন এবং প্রতিরোধ যুদ্ধের সেক্টর হেডকোয়ার্টার ও সাব-সেক্টরগুলোয় অবস্থান নেওয়া যোদ্ধাদের শেষ দলটি অস্ত্র ত্যাগ করে ১৯৭৮ সালের এপ্রিল মাসে। বীর মুক্তিযোদ্ধা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ছিলেন এই প্রতিরোধ যোদ্ধাদের অন্যতম।এর পূর্বে ১৯৬৮ ও ১৯৬৯ সালে তিনি চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। একাত্তরে গঠন করেন ‘জয় বাংলা’ বাহিনী। সেই সময় গ্রেফতার হন পাকিস্তানি সেনাদের হাতে। পরে পাগলের অভিনয় করে কারাগার থেকে ছাড়া পেয়ে পালিয়ে যান ভারতে। সেখানে উত্তর প্রদেশের তান্ডুয়া সামরিক ক্যাম্পে প্রশিক্ষণরত মুক্তিযোদ্ধাদের একটি স্কোয়াডের কমান্ডার নিযুক্ত হন মহিউদ্দিন। যুবলীগের নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন তিনি। শ্রমিক রাজনীতিতেও তিনি যুক্ত হন।
সেই ১৫ই আগস্টে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী তখন তার কয়েক সঙ্গীসহ ছিলেন ঢাকায়। হত্যাকান্ডের রাতে মহিউদ্দিন ছিলেন ঢাকায় কমলাপুরের একটি হোটেলে। ওইদিন রাত প্রায় ১০টা পর্যন্ত মহিউদ্দিন চৌধুরী ছিলেন রাজনৈতিক গুরু শেখ ফজলুল হক মণি’র বাসায়, ভাতও খেয়েছেন শেখ মণি’র সাথে। শেখ ফজলুল হক মণি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে, যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা, বাকশালের সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম গেরিলা দল 'মুজিব বাহিনী' তিনি প্রতিষ্ঠা করেন। শেখ মণিকেও পরিবারসহ হত্যা করেছিলো ঘাতকরা। সকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাপ্টেন মনসুর আলী’র সঙ্গে মহিউদ্দিনের বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে যাবার কথা ছিল। সেই অনুযায়ী সকাল ৯টার দিকে কমলাপুর হোটেল থেকে বের হয়ে রিক্সায় করে তিনি যাচ্ছিলেন মিন্টো রোডে মন্ত্রীর বাসায়।
২০১৫ সালে রমেন দাশগুপ্তকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে মহিউদ্দিন চৌধুরী এ সম্পর্কে বলেন,
‘রিক্সায় বসে দেখি চারদিক থমথমে। সকাল ৭টার দিকে হঠাৎ একটি দোকানের ভেতরে রেডিওতে শুনি ডালিমের কন্ঠ। শুনলাম, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে। দিশেহারা হয়ে আমি রিক্সা থেকে নেমে যাই। মানুষের কাছ থেকে শুনলাম, মণি ভাইকেও নাকি খুন করা হয়েছে। তড়িৎ গতিতে সিদ্ধান্ত নিলাম, চট্টগ্রাম চলে যাব। ’
এক পর্যায়ে সকলেই জেনে যান বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে। তারা দ্রুত বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে যে যেভাবে পারেন চট্টগ্রামে চলে আসেন। চট্টগ্রামে সবাই মিলিত হয়ে বাকি নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন চট্টগ্রামে। চট্টগ্রাম সেনানিবাসের তৎকালীন জিওসির সমর্থন পেয়ে যান মহিউদ্দিন চৌধুরী। মুক্তিযোদ্ধা মৌলভী সৈয়দ, মােহাম্মদ ইউনুছ, আয়ুব বাঙ্গালি, এস. এম জামাল, মােহাম্মদ শফিসহ অনেককে নিয়ে মহিউদ্দিন চৌধুরী বঙ্গবন্ধু হত্যার বদলা নেয়ার শপথ নেন। কিন্তু মোশতাকের মন্ত্রীসভায় যোগ দেয়া সদস্যদের অপতৎপরতায় কাজটি আরো কঠিন হয়ে গেলো।
এর মাঝেই খন্দকার মোস্তাক পল্টনে জনসভা ডাকলেন। তখন তিনি 'ডেমোক্র্যাট লীগ' গঠন করছিলেন। গোয়েন্দা সংস্থা, পুলিশ-সেনাবাহিনীতে ভরপুর পল্টন ময়দান। মহিউদ্দিন চৌধুরীসহ যারা শেখ মণির সাথে রাজনীতি করতো তারা আলোচনায় বসলো কিভাবে জনসভা ভন্ডুল করা যায়। বোমা-গ্রেনেডে কাজ হবেনা, সিদ্ধান্ত নেয়া হলো জনসভায় সাপ ছেড়ে দেয়া হবে। সিদ্ধান্তটা ছিল মহিউদ্দিন চৌধুরীরই। এমন সিদ্ধান্তে কেউ দ্বিমত না করে লুফে নিলো। শেখ মণির বডিগার্ড শাহাবুদ্দিন সাবু’র নেতৃত্বে কয়েকজন গিয়ে সাপ ছেড়ে দিয়ে আসলো। জনসভা পন্ড হয়ে গেলো।
অক্টোবর, ১৯৭৫ এ মহিউদ্দিন চৌধুরী গ্রেফতার হন। ৬ মাস পরে মহিউদ্দিন চৌধুরী জামিন লাভ করে বের হন রাজশাহী কারাগার থেকে। তার দলের সদস্যরা বাইরে থেকে মােশতাক সরকারকে উৎখাতের পরিকল্পনা নিয়ে গঠন করেন 'মুজিব বাহিনী'। চট্টগ্রাম-ঢাকায় মুজিব বাহিনীর সদস্যরা ছড়িয়ে পড়ে বিক্ষিপ্ত বােমা হামলা করতে থাকে। তখন চলছিল মার্শাল ল।
সেই দুঃসময়ে বঙ্গবন্ধুর সাত মার্চের ভাষণ প্রচার নিষিদ্ধ করা হয়। মহিউদ্দিনের নেতৃত্বে শহরের প্রাণকেন্দ্র আন্দরকিল্লা মুক্ত এলাকা ঘােষণার পরিকল্পনা নিয়ে তিনি ও তাঁর বাহিনী ব্যাপক বােমা হামলা চালান। আলমাস সিনেমা হলের পাশে তৎকালীন হােটেল কিছুক্ষণের সামনে এবং আগ্রাবাদ এলাকায় ভয়াবহ বােমা বিক্ষোরণ ঘটান তাঁরা। প্রায়দিনই বোমা বিস্ফোরন করা হতো তখন। বিভিন্ন ছদ্মবেশ ধারণ করে চালানাে হামলার পর আলােড়ন সৃষ্টি হয়। ইতোমধ্যে সরকার তাদের সশস্ত্র বিপ্লবের কথা অবগত হয়ে যায়।
সশস্ত্র প্রতিবাদের পরিকল্পনা সম্পর্কে মহিউদ্দিন চৌধুরী সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘প্রথমে থানা-ফাঁড়ি আক্রমণ করব, রাস্তায় রাস্তায় গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটাব। চট্টগ্রাম বন্দরকে নিজেদের আয়ত্তে নেব। চট্টগ্রামকে বিচ্ছিন্ন করে দেব। এটাই ছিল আমাদের পরিকল্পনা। ’
এরপর আরো হামলা চালাতে তারা মেহেদীবাগের একটি বাসা ঠিক করে বােমা বানানাে শুরু করেন। দুঃসাহসী যুবক কেশব ও পীযুষ- এর তত্ত্বাবধানে বোমা বানানাে শুরু হয়ে যায়। একদিন অসাবধানতাবশত বিকট শব্দে একটি বােমার বিস্ফোরণ ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পীযুষকে ধরে ফেলে। অন্যরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। এ ঘটনা নিয়ে স্পেশাল মার্শাল 'ল' ট্রাইব্যুনালে মামলা হয়। মামলায় মহিউদ্দিনকেও অভিযুক্ত করা হয়। ট্রাইব্যুনালের বিচারে মহিউদ্দিনের অনুপস্থিতিতে তার পাঁচ এবং পীযুষের উপস্থিতিতে সাত বছরের কারাদণ্ড হয়। এছাড়া মহিউদ্দিন ও তার সহযােগীদের বিরুদ্ধে এর আগে চট্টগ্রাম ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের হয়েছিল।
এ অবস্থায় গ্রেফতার এড়াতে মহিউদ্দিন চৌধুরী চৌদ্দগ্রাম সীমান্ত দিয়ে ভারত চলে যান। ভারত থেকে মহিউদ্দিন চৌধুরী প্রতিনিয়ত দেশের খবরা-খবর সংগ্রহ করতেন সহযােগিদের কাছ থেকে। তাঁর সহযোদ্ধারাও পরবর্তীতে ভারতে চলে যান।
আগরতলায় ক্যাম্প করে শুরু হয়েছিলো প্রশিক্ষণ। হিমালয়ের তান্দুয়ায় হয় আরো উচ্চতর প্রশিক্ষণ। আওয়ামী লীগের এমপি চিত্তরঞ্জন সুথার ভারতে নিয়ে গিয়েছিলেন সকলকে। তিনি কয়েকজন এমপি’র মধ্যে একজন যিনি বঙ্গবন্ধু হত্যার সশস্ত্র প্রতিবাদের পরিকল্পনা করেছিলেন। ৭৬ সালে মার্চে মহিউদ্দিন চৌধুরী গিয়ে সেখানে যোগ দেন। সেখানে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীসহ মৌলভী সৈয়দ, অমল মিত্র, অমলেন্দু সরকার, শফিউল বশর, সন্তোষ ধর, ফরিদপুরের সালাহউদ্দিন, পটুয়াখালীর খান মোশাররফ, গৌরনদীর সন্তোষ, ফারুক, নড়াইলের শাহজাহান, মাঈদুল ইসলাম, মাহফুজুল আলম বেগ, চট্টগ্রামের এস এম ইউসুফ (ছদ্মনাম ছিল শামীম), মোছলেম উদ্দিন, মিরসরাইয়ের ফজলুল হক বিএসসি সশস্ত্র প্রতিবাদের প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন।
১৯৭৭ সালের প্রথমদিকে তাঁরা কিছুসংখ্যক হাতে তৈরী গ্রেনেড পাঠান। এস এম কামালউদ্দিনের সেগুলো কৈবল্যধাম থেকে নিয়ে যাবার কথা ছিল। কিন্তু গোলদার নামে এক আওয়ামী লীগ কর্মী সেগুলো চট্টগ্রাম স্টেশনে আনতে গিয়ে ধরা পড়ে যান। প্রশিক্ষণ নিয়ে কেউ কেউ চট্টগ্রামে ফিরে গ্রেনেড বানাতেও শুরু করেন। বলুয়ারদিঘির পাড়ের আবু তালেব আর আবু কালাম গ্রেনেডগুলো নিজেদের হেফাজতে রাখতেন। আগ্রাবাদ-আন্দরকিল্লায় কয়েক দফা গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিল। এস এম কামাল উদ্দিন অস্ত্র সংগ্রহ করেছিলেন।
ভারতে মহিউদ্দিন চৌধুরীর কষ্টের জীবন কাটে প্রায় দুই বছর। এসময় তাঁর উপর নেতা-কর্মীদের থাকা-খাওয়ার দায়িত্বও যোগ হয়। পরিস্থিতির তাগিদে কলকাতায় সাঙ্গু ভ্যালি নামক একটি দোকানে কর্মচারীর কাজ করেন। টি বয়ের কাজও তাকে করতে হয়েছে। পাশাপাশি একটি হোটেলে ভাত রান্নার চাকুরি নেন। কিন্তু মহিউদ্দিন মুসলমান হওয়ায় তার রান্না করা ভাত খেতে আপত্তি ছিল অনেকের। ব্রাহ্মণ সেজে আরেকটি হোটেলে ভাত রান্নার কাজ নেন মহিউদ্দিন। এরপর পরিচয় গোপন করে মহিউদ্দিন, অমল মিত্র, অমলেন্দু সরকারসহ কয়েকজন মিউনিসিপ্যাল করপোরেশনের সাব-কন্ট্রাক্টরের অধীনে আবর্জনা পরিস্কারের কাজ নেন। মোটর ওয়ার্কশপেও কাজ করেন কিছুদিন। এর পাশাপাশি তিনি হাওড়া রেলস্টেশনে পত্রিকাও বিক্রি করতেন। হকারের কাজও করেছেন। এই পরিশ্রমের অর্থ দিয়েই তিনি নিজে চলেছেন, সাথে সতীর্থদের চালিয়েছেন।
তাঁর মতাে প্রায় দেড় শতাধিক প্রতিবাদী বিভিন্ন গ্রুপ হয়ে বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করতেন। স্থানীয়রা মহিউদ্দিন চৌধুরীকে নকশাল গ্রুপের সদস্য বলেও মনে করতো। কলকাতায় অবস্থানকালে তিনি পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর সান্নিধ্য লাভ করেন। জ্যোতি বসুর প্রত্যক্ষ সহযােগিতায় সাব-কন্ট্রাকটরির কাজ করে তিনি কিছু অর্থ উপার্জন করেন। সেখানে তিনি আগরতলার অধিবাসী এবং 'মানিক চৌধুরী' নামে পরিচিত হলেও জ্যোতি বসুর জানা ছিল তিনি যে বাংলাদেশী। ঐ সময়ে দেশে সামরিক গােয়েন্দারা লিস্ট করে গ্রেফতার অভিযান শুরু করে।
এর মধ্যেই ১৯৭৭ সালে ভারতে ক্ষমতার পট পরিবর্তন হয়। আসে মােরারজী দেশাই সরকার। এদিকে একই সময়ে বাংলাদেশে ক্যু, পাল্টা ক্যু’র ধারাবাহিকতায় ক্ষমতায় আসে সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান। মুজিব হত্যার বদলা নিতে বদ্ধপরিকর যোদ্ধাদের সহায়তা করেনি দেশাই সরকার। উলটো শুরু করেন তাদের পুশব্যাক করা। তাদের অনেকেই ধরা পড়েন মোশতাক ও জিয়া নিয়ন্ত্রাধীন সরকারের হাতে।
১৯৭৮ সালে মৌলভী সৈয়দ দেশে ফেরার সময় সেনাবাহিনীর হাতে ধরা পড়ে যান। ঢাকার জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেলে গোয়েন্দারা পাশবিক নির্যাতন চালায় তাঁর উপর। তাকে সেখানেই হত্যা করা হয়। পরবর্তীতে তাঁর বাবাকে ডেকে লাশ শনাক্ত করে হেলিকপ্টারে বাঁশখালী পাঠিয়ে দিয়ে সেনা তত্ত্বাবধানে দাফন করা হয়। এদিকে হুলিয়া মাথায় নিয়ে ৭৯ সালের শুরুর দিকে গোপনে দেশে ফেরেন মহিউদ্দিন চৌধুরীসহ বেশ কয়েকজন। জিয়া সরকার শুরু থেকেই তাদের প্রতিরোধের সিদ্ধান্ত নিয়ে সেনাবাহিনী লেলিয়ে দেন। বাধ্য হয়ে আত্মগোপনে থাকতে হয় তাদের।
দেশে ফেরার পরে একদিন ছদ্মবেশে টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর মাজারে যান মহিউদ্দিন চৌধুরী। সেসময় মাজার বলতে কিছু ছিলোনা। এমনকি বাঁশের সীমানাও ভালভাবে ছিলনা। যখন পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়, তিনি চট্টগ্রাম থেকে নির্মাণ শ্রমিক নিয়ে যান গোপালগঞ্জে। গোপালগঞ্জ তখন ছিল বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মত। ফরিদপুর থেকে ইট আর সিমেন্ট সংগ্রহ করে বঙ্গবন্ধুর কবর ঘিরে পাকা দেয়াল তুলে দেন মহিউদ্দিন চৌধুরী। দক্ষিণ কাট্টলী থেকে শ্বেতপাথরে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান’ লিখে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। সেটা জাতির পিতার কবরে লাগিয়ে দেন সযত্নে।
এভাবে কখনো সংগ্রাম করে, কখনো আত্মগোপনে থেকে প্রতিবাদ চালিয়ে দিয়েছেন মহিউদ্দিন চৌধুরীসহ সকল প্রতিরোধ যোদ্ধা। ভারতে আত্মগোপনে থাকার সময়ে ১৯৭৬ সালের ১৭ মার্চ কলকাতার লেকটাউনে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিবসের আয়োজন করেছিলেন তারা। সেই আয়োজনে এসেছিলেন শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানাও। সেখানে সকলকে দেখে আবেগতাড়িত হয়ে কেঁদে ফেলেন শেখ হাসিনা। এরপর ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনা বাংলাদেশে ফিরে আসেন। সেদিন ঢাকা বিমান বন্দরে মহিউদ্দিন চৌধুরীসহ তাঁর দলবল উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু কন্যার জন্য। এরপর রাজনীতিতে নানা পট পরিবর্তন হয়, হয় ক্ষমতার পালাবদল। কিন্তু মহিউদ্দিন চৌধুরী সকল দুঃসময়ে সর্বদা থেকেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার পাশে, আওয়ামীলীগের পাশে। কোন লোভ লালসা তাকে রাজনৈতিক নৈতিকতা থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ সমুন্নত রাখতে লড়াই, সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন আমৃত্যু।
তথ্য সংগ্রহ, সংযোজন ও বিন্যাস: Aniruddha Das Kolpo
No comments