আজ রক্তাক্ত কলঙ্কময় ভয়াল ২১ আগস্ট।
২১ আগস্টের রক্তাক্ত হামলায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন ১৬ জন।
২০০৪ সালের এই দিনে রাজধানী ঢাকার বুকে শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক সমাবেশে চালানো হয় নজিরবিহীন হত্যাযজ্ঞ। হিংসার দানবীয় গ্রেনেড সন্ত্রাসে আক্রান্ত করে মানবতাকে। আক্রান্ত হন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনা। হামলার ধরন ও লক্ষ্যস্থল থেকে এটা স্পষ্টত যে শেখ হাসিনাকে হত্যা করাই ছিল ওই গ্রেনেড ও গুলিবর্ষণের উদ্দেশ্য।
বঙ্গবন্ধু এভিনিউর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সেদিন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে এসে সন্ত্রাসের শিকার হন আওয়ামী লীগ সভাপতি, বঙ্গবন্ধু কন্যা ঘটনার সময় দলীয় নেতা-কর্মীরা মানববর্ম রচনা করে শেখ হাসিনাকে রক্ষা করলেও ওই হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নেতা-কর্মী প্রাণ হারান।
তখন ক্ষমতায় ছিল বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার। সেদিন ‘সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতি বিরোধী‘ শান্তি মিছিলের আয়োজন করেছিল তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ। আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে প্রধান অতিথি ছিলেন। সন্ত্রাসবিরোধী শান্তি মিছিলের আগে বঙ্গবন্ধু এভিনিউর সামনে স্থাপিত অস্থায়ী ট্রাকমঞ্চে দাঁড়িয়ে বক্তৃতার শেষ হওয়ার পরপরই তাঁকে লক্ষ্য করে উপর্যপুরি গ্রেনেড হামলা শুরু হয়।
বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হতে থাকে একের পর এক গ্রেনেড। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ১৩টি গ্রেনেড বিস্ফোরণের বীভৎসতায় মুহূর্তেই মানুষের রক্ত-মাংসের স্তূপে পরিণত হয় সমাবেশস্থল। বঙ্গবন্ধু এভিনিউ পরিণত এক মৃত্যুপুরীতে। স্প্লিন্টারের আঘাতে মানুষের হাত-পাসহ বিভিন্ন অংশ ছিন্নভিন্ন হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে। সভামঞ্চ ট্রাকের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখা যায় রক্তাক্ত নিথর দেহ। লাশ আর রক্তে ভেসে যায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউর পিচঢালা পথ। নিহত-আহতদের জুতা-স্যান্ডেল ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকে। মুহূর্তের মধ্যে পুরো এলাকা ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়।
ভেসে আসে শত শত মানুষের গননবিদারী আর্তচিৎকার। বেঁচে থাকার প্রানপণ চেষ্টারত মুমূর্ষুদের কাতর-আর্তনাদসহ অবর্ণনীয় মর্মান্তিক সেই দৃশ্য। সেদিন রাজধানীর প্রতিটি হাসপাতালে আহতদের তিল ধারণের স্থান ছিল না। নারকীয় গ্রেনেড হামলায় ভাগ্যগুণে অলৌকিকভাবে প্রাণে বেঁচে গেলেও শেখ হাসিনার দুই কানের শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঘাতকদের প্রধান লক্ষ্য শেখ হাসিনা বেঁচে গেছেন দেখে তার গাড়ি লক্ষ্য করে পুনরায় ১২ রাউন্ড গুলি করা হয়। তবে টার্গেট করা সেই গুলি ভেদ করতে পারেনি বঙ্গবন্ধু কন্যাকে বহনকারী বুলেটপ্রুফ গাড়ির কাঁচ। হামলার পরপরই শেখ হাসিনাকে কর্ডন করে গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় তার তৎকালীন বাসভবন সুধা সদনে।
২১ আগস্টের রক্তাক্ত হামলায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন ১৬ জন। পরে সব মিলিয়ে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৪ জনে। রক্তাক্ত-বীভৎস ওই ভয়াল গ্রেনেড হামলায় আইভি রহমান ছাড়াও সেদিন নিহত হন, ল্যান্স করপোরাল (অব.) মাহবুবুর রশীদ, হাসিনা মমতাজ রিনা, রিজিয়া বেগম, রফিকুল ইসলাম (আদা চাচা), রতন শিকদার, মোহাম্মদ হানিফ ওরফে মুক্তিযোদ্ধা হানিফ, মোশতাক আহমেদ, লিটন মুনশি, আবদুল কুদ্দুছ পাটোয়ারী, বিল্লাল হোসেন, আব্বাছ উদ্দিন শিকদার, আতিক সরকার, মামুন মৃধা, নাসিরউদ্দিন, আবুল কাসেম, আবুল কালাম আজাদ, আবদুর রহিম, আমিনুল ইসলাম, জাহেদ আলী, মোতালেব ও সুফিয়া বেগম। গ্রেনেডের স্প্রিন্টারের সঙ্গে যুদ্ধ করে ঢাকার মেয়র মোহাম্মদ হানিফসহ আরও কয়েকজন পরাজিত হন।
হামলায় আওয়ামী লীগের পাঁচ শতাধিক নেতা-কর্মী গুরুতর আহত হয়ে শরীরে স্প্লিন্টার নিয়ে আজো মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। আহত হয়েছিল বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা। এখনও অনেক নেতা-কর্মী সেদিনের সেই গ্রেনেডের ¯স্প্লিন্টারের মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। অনেক নেতা-কর্মীকে তৎক্ষণাৎ দেশে-বিদেশে চিকিৎসা করালেও তারা এখনও পর্যন্ত পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠেননি।
এদিকে গ্রেনেড হামলার পর ভয়, শঙ্কা ও ত্রাস গ্রাস করে ফেলে গোটা রাজধানীকে। এই গণহত্যার উত্তেজনা ও শোক আছড়ে পড়ে দেশ-বিদেশে। হামলার পর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা নিজে বাঁচতে ও অন্যদের বাঁচাতে যখন ব্যস্ত হয়ে পড়েন, ঠিক তখনই পুলিশ বিক্ষোভ মিছিলের ওপর বেধড়ক লাঠি-টিয়ার শেল চার্জ করে। এভাবে সেই রোমহর্ষক ঘটনার আলামত নষ্ট করা হয়। পরবর্তীতে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রত্যক্ষ মদতে ওই ঘটনা ধামাচাপা, ‘জজ মিয়া‘ নাটক সাজিয়ে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করাসহ হেন কোনও কাজ নেই, যা করেনি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার।
No comments