স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের ইতিহাস
স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সর্বশেষ খেলাটি অনুষ্ঠিত হয় মুম্বইতে যেখানে মহারাষ্ট্র ফুটবল দলের নেতৃত্ব দেন ভারতের খ্যাতনামা সাবেক ক্রিকেট অধিনায়ক নবাব মনসুর আলি খান পতৌদি।
![]() |
স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল |
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বাংলাদেশের একটি ফুটবল দল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত অর্জন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্যার্থে অর্থ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে ভারতের বিভিন্ন স্থানে প্রদর্শনী ফুটবল খেলায় অংশ নেয়। এই দলটি স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল নামে পরিচিত ছিল।পৃথিবীর ইতিহাসে যুদ্ধকালীন প্রথম ফুটবল দল এটি।[১] বর্তমানে ফিলিস্তিন ফুটবল দল এ ধরনের তহবিল সংগ্রহ ও জনমত গঠন করছে।
৭১ সালের জুন মাসে দলটি গঠিত হয়। প্রথম দিকে কয়েকজনকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠিতে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের কথা উল্লেখ করে মুজিবনগর গিয়ে তাতে যোগ দিতে বলা হয়। এসময় মুজিবনগরে প্রথমে গিয়ে উপস্থিত হন প্রতাপ শঙ্কর হাজরা, সাইদুর রহমান প্যাটেল, শেখ আশরাফ আলীসহ আলী ইমাম এবং অন্যরা। এরপর সেখান থেকে আকাশবাণীতে (কলকাতা রেডিও) ঘোষণা দেয়া হলো বিভিন্ন ক্যাম্পে অবস্থানরত খেলোয়াড়দের মুজিবনগরে রিপোর্ট করার জন্য। ঘোষণার পরে ৪০ জন খেলোয়াড় মুজিবনগর ক্যাম্পে যোগ দেন। সেখান থেকে ৩০ জন বাছাই করে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল গঠন করা হয়। পরে আরো একজনকে অন্তর্ভুক্ত করলে সদস্য সংখ্যা ৩১ হয়।
সে দল ২৩ জুলাই মুজিবনগর থেকে নদিয়া পৌঁছে। নদিয়ার ডিসি দীপককানত্ম ঘোষ এবং স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদকসহ অন্য কর্মকর্তারা দলটিকে অভ্যর্থনা জানান। ২৫ জুলাই কৃষ্ণনগর স্টেডিয়ামে নদিয়া একাদশের বিপক্ষে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল প্রথম খেলতে নামে। এই দিন মেহেরপুর সীমান্ত এলাকা দিয়ে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি ম্যাচ উপভোগ করতে স্টেডিয়ামে আসে। খেলা শুরুর আগে জাতীয় পতাকা নিয়ে মাঠ প্রদক্ষিণ করেন দলের সদস্যরা। এ সময় জাতীয় সঙ্গীতও বাজানো হয়। ম্যাচটি ২-২ গোলে ড্র হয়। স্বাধীন বাংলা দলের হয়ে প্রথম গোল করেন শাহজাহান। স্বীকৃতি ছাড়া বাংলাদেশের পতাকা ওড়ানোর দায়ে পরদিন নদিয়ার ডিসিকে চাকরিচ্যুত করা হয়।
৩৫ জন খেলোয়াড়, সাথে ম্যানেজার এবং কোচসহ সর্বমোট ৩৭ জন নিয়ে গড়া ফুটবল দলের অধিনায়ক ছিলেন জাকারিয়া পিন্টু। সহঃ অধিনায়ক ছিলেন প্রতাপ শঙ্কর হাজরা। ব্যবস্থাপক ছিলেন তানভীর মাজহারুল ইসলাম তান্না (পরবর্তীতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কর্মকর্তা) এবং প্রশিক্ষক ছিলেন ননী বসাক। পুরো দলের চিত্রটি নিম্নরূপঃ
ম্যানেজার : তানভীর মাজহার তান্না কোচ : ননী বসাক
খেলোয়াড়রা হলেন:
৩৫ জন ফুটবলার শেষ পর্যন্ত ছিলেন না। অনেকে যুদ্ধে চলে গিয়েছেন। প্যাটেলও সরাসরি যুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন। এছাড়াও একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা রয়েছে। স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলে দুজন অধিনায়কত্ব করেছেন। জাকারিয়া পিন্টু ১০টি এবং তিনটি ম্যাচে আইনুল হক ছিলেন অধিনায়ক।
স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের ৩৫ ফুটবলার হলেন: জাকারিয়া পিন্টু (অধিনায়ক), আইনুল হক (অধিনায়ক), প্রতাপ শংকর হাজরা (সহ-অধিনায়ক), শাহাজাহান আলিম, কায়কোবাদ, তসলিম উদ্দিন আহমেদ, আলী ইমাম, সাইদুর রহমান প্যাটেল, শেখ আশরাফ আলি, খোন্দকার মো: নূরুন্নবী, নওশের, এনায়েত, কাজী মোঃ সালাউদ্দিন (ছদ্দ নাম-তুর্জ হাজরা), লালু, অমলেশ সেন, বিমল, হাকিম, খোকন, সুভাষ, লুৎফর, মজিবুর, শিরু, সাঈদ, পেয়ারা, নিহার, গোবিন্দ, অনুরুদ্ধ, সাত্তার, বিরু, মোহন, সুরুজ, মাহমুদ, সঞ্জীব, খালেক ও মোজাম্মেল।
সাফল্য
৮ আগস্ট কলকাতার অন্যতম ফুটবল পরাশক্তি মোহনবাগানের খ্যাতনামা ফুটবলার গোস্টপালের নামে গড়া একাদশের বিপক্ষে পরবর্তী ম্যাচ খেলে স্বাধীন বাংলা দল।মূলত মোহনবাগানের খেলোয়াড়রাই এই দলের হয়ে মাঠে নামেন। এভাবে বিভিন্ন এলাকায় মোট ১৬টি ম্যাচ খেলে স্বাধীনতা সংগ্রামের পক্ষে জনমত গড়ে তোলার পাশাপাশি ফান্ড সংগ্রহ করা হয়। ম্যাচগুলো থেকে আয়কৃত পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিযুদ্ধের ফান্ডে জমা দেয়া হয়। ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয়ের পর দেশে ফেরেন স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সদস্যরা। যুদ্ধ-পরবর্তী বাংলাদেশের ফুটবলকে চাঙ্গা করতে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল কাজ করে।এই দলটি ভারতের বিভিন্ন স্থানে মোট ১২ টি খেলায় জয়লাভ করে,সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমানের ভাষ্য মতে মুক্তিযোদ্ধা ফান্ডে ১৬ লাখের কিছু বেশি ভারতীয় রুপি দিয়েছে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল।
সর্বশেষ খেলাটি অনুষ্ঠিত হয় মুম্বইতে যেখানে মহারাষ্ট্র ফুটবল দলের নেতৃত্ব দেন ভারতের খ্যাতনামা সাবেক ক্রিকেট অধিনায়ক নবাব মনসুর আলি খান পতৌদি।
No comments